আমার উদ্যোগ, আমার আবার বেতন কিসের ? স্টার্টআপের যত ভুল !

আপনার বেতন কত? প্রশ্নটা করতেই ভদ্রলোক হকচকিয়ে গেলেন। আমাকে উল্টা প্রশ্ন করে বসলেন গত এক ঘন্টায় যে উনি আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন উনি একজন অন্ট্র্যাপ্রেনার, একজন ক্ষুদ্র উদ‍্যোক্তা, একটি StartUp এর মালিক, আমি সেটা বুঝেছি কি না!

হ‍্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনার বেতন কত?”

ঐ উদ‍্যোক্তার মত আপনিও হয়ত ভাবছেন যে একজন উ‍দ‍্যোক্তার স‍্যালারী কি করে থাকে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কেন থাকবে না? বিল গেটসের নাই? জুকারবার্গের নাই?

আপনি ব‍্যবসা করছেন ভালো কথা; কিন্তু আপনার স‍্যালারী থাকতেই হবে। না থাকলে আপনি ব‍্যবসা করছেন না; খেলছেন জুয়া! কিভাবে? আসুন ব‍্যাখ‍্যা করবার চেষ্টা করি।

আপনি ৩০০ টাকায় একটি প্রোডাক্ট কিনলেন, ওভারহেড কষ্ট আছে ১০০ টাকা; মোট ৪০০ টাকা খরচ। আপনি বিক্রি করলেন ৫০০ টাকায়। মাস শেষে আপনার লাভের খাতায় আসলো ৫০,০০০ টাকা। কত টাকা রি-ইনভেষ্ট করবেন? কত টাকা নিজের জন‍্য রাখবেন? কত টাকা বেতন দিবেন?

সব থেকে বড় প্রশ্ন, “আপনি যে এই প্রতিষ্ঠানের জন‍্য খাটছেন, আপনার কি মুজুরি নাই?” আপনার অফিসের পিওনের আছে, আপনার নাই?

আমাদের দেশের নতুন উ‍দ‍্যোক্তাদের এটা একটা বড় সমস‍্যা যে নিজের জন‍্য স‍্যালারী ধরে রাখেন না; ফলে কোন কিছুই ঠিক মত হয়ে উঠে না। Sajjat Hossain ভাই আমাকে বেশ আগে একবার বলেছিলেন যে আমার বড় সমস‍্যা “পারসোনাল মানি ম‍্যানেজমেন্টে”। কথাটা বুঝতে কয়েক বছর কেটে গেছে। এক সময় বুঝতে পেরেছি যে আমি যেই ব‍্যবসা করছি, সেই ব‍্যবসার উপর দিয়েই আমি চলি, চলে আমার পরিবার, চলে আমার সকল খরচ। প্রতি মাসেই আমাকে নিজের ঘর ভাড়া দিতে হয়, দিতে হয় বিভিন্ন বিল। অর্থাৎ কিছু করি বা না করি, প্রতি মাসেই আমার নিজের ফিক্সড কিছু খরচ থাকে।

একজন উ‍দ‍্যোক্তা হিসাবে আপনাকেও আপনার স‍্যালারী হিসাব করতে হবে। লক্ষ‍্য করুন, আমি বলেছি হিসাব করতে হবে। কারণ আমি নিশ্চিত এত সময়ে আপনি হেসে ফেলেছেন এটা ভেবে যে আপনার ব‍্যবসার পুঁজি আছে ২লাখ, মাসে ২০ হাজার করে স‍্যালারী নিলেতো ১০ মাসে ২ লাখই শেষ, ব‍্যবসা করবো কি দিয়ে? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হচ্ছে, এই যে প্রথম দিকে আপনি স‍্যালারী নিতে পারছেন না, সেটা আপনি কোম্পানির বাকির খাতায় লিখবেন।

প্রথমে যার কথা বলছিলাম, তার কথাতে ফেরৎ আসি। ভদ্রলোক একটি ই-কমার্স চালান; উনি ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের জন‍্য নিজের ফ্রিল‍্যান্সিং এর ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করেন। মাস শেষে ই-কমার্স থেকে লাভ থাকে ৪০-৫০ হাজার। উনার হিসাবে এই ৪০-৫০ হাজারই উনার লাভ। পরে দেখালাম যে এই ৪০-৫০ হাজার এর মধ‍্যে তার ২০-২৫ হাজার আছে ফ্রিল‍্যান্সিং এর টাকা; এটা তিনি আলাদা করতে বাধ‍্য। কারণ আগামী কাল আমি যদি উনার প্রতিষ্ঠানের ৫০% শেয়ার কিনে নেই, উনি কি আর ঐ ২০-২৫ হাজার টাকা ফ্রিল‍্যান্সিং করে কোম্পানিতে ঢুকাবেন? নিশ্চই না।

আবার আমি ৫০% শেয়ার কিনলে, আমি কিন্তু প্রফিটের ৫০% শেয়ার আশা করবো; উনি যে কষ্ট করছেন, এটা কোথায় যাবে? এটা উনি স‍্যালারী হিসাবে নিয়ে নিবেন। কিন্তু প্রশ্ন জাগতে পারে যে যদি কারও কাছে শেয়ার বিক্রি করা না থাকে, শুধু নিজেরই থাকে, তাহলে কেন স‍্যালারী নিবো? স‍্যালারী নিবেন নিজের নিরাপত্তার জন‍্য; নিজের অবস্থান বোঝার জন‍্য। ব‍্যবসা করে যাচ্ছেন ৩/৪ বছর, মাসে মাসে টাই-টাই করে ব‍্যবসার খরচ, সংসারের খরচ চলছে। আসলে কি আগাচ্ছেন? যদি আপনার স‍্যালারীটা আলাদা করে নিতেন, তাহলে দেখেন আপনি দ্রুতই রাস্তায় চলে আসছেন।

মাসিক লাভ হয়ত থাকে ৫০ হাজার; এর মধ‍্যে ৩৫ হাজারই আপনার পরিবারের জন‍্য লেগে যায়। আপনি এই টাকাটা একবারে সরিয়ে নিলে বুঝবেন আপনার প্রতিষ্ঠান কোথায় আছে; কোন দিকে যাচ্ছে, আপনি যে এত খাটছেন, তার বিনিময়ে ৫০হাজার ভালো এমাউন্ট হলেও যখন দেখবন কোম্পানিতে মূলত থাকছে ১৫ হাজার; তখন নিজের অবস্থানটা সহজেই ধরে ফেলতে পারবেন।

আপনার প্রতিষ্ঠানে যারা চাকুরী করে, আপনি তাদের থেকে অনেক অনেক বেশী প্রেসার নেন। টাকার প্রেসার, চিন্তার প্রেসার, পাওনাদারের প্রেশার, কাষ্টমারের প্রেসার, আরও কত কি। তার জন‍্য আপনারই যদি স‍্যালারী না থাকে, চলবে?

Leave a Reply