প্রথম পর্বে কথা হচ্ছিলো ব্যবসা আর ক্রিকেটের সম্পর্ক নিয়ে। ব্যবসা হচ্ছে পুরো ক্রিকেট খেলার মত। কিন্তু সেটা কখনোই ওয়ান ডে বা টুয়েন্টি টুয়েন্টি না। ব্যবসা হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট। বাংলাদেশে দেখা যায় সবাই ফটকা ব্যবসা করত আগ্রহী। রোজার সময় খেজুর বিক্রি করবে, ঈদের আগে আগে টুপি বিক্রি করবে এরপর ঈদের পরে বেশ কিছুদিন হা করে বসে থেকে পরবর্তী সিজনের অপেক্ষা করবে। আপনি এই উপায়ে ব্যবসা করলে জীবন ধারণ করতে পারবেন কিন্তু অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবেন না। আপনাকে টিকে থাকার প্রতিটা ধাপ খুব ভালো করে জানতে হবে যেন খুব সহজেই আপনি হারিয়ে না যান।
প্রথম পর্বেই আপনাদের বলেছি সাপ্লাই চেইনের ছিদ্র বের করার জন্য। এমন একটা ছিদ্র যাতে অন্য কেউ কখনও ঢুকেনি আর ঢুকলেও ঠিক সেই জিনিসটা বানায় নি যেটা কাস্টোমার চাচ্ছে। তাই আপনি সরাসরি বাজারে চলে যাবেন এবং বুঝতে চেষ্টা করবেন আপনি যে প্রোডাক্টটা প্ল্যান করছেন সেটার টার্গেটেড কাস্টোমার কারা। আমি টার্মটা আবার বলি “টার্গেটেড কাস্টোমার” অর্থ্যাৎ আপনার জিনিস কে বা কারা কিনবে বলে আপনি মনে করছেন?
প্রোডাক্ট যখন ডিজাইন করবেন, যেহেতু আপনি চাহিদার জায়গাটা জেনে ফেলেছেন তখন শুধু জানার পালা যে এই চাহিদাটা কার। সহজ করে বলতে গেলে আবার আলুর ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের উদাহরণে ফেরত যাই। আপনি ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের না ভাজা প্যাকেটের চাহিদা বাজারে আছে তা জেনে ফেলেছেন কিন্তু আপনি এখন জানার চেষ্টা করবেন এই ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের প্যাকেটটা আসলে কিনবে কে। আমার আম্মু গত ১২ বছর ধরে কার্ট ঠেলে ঠেলে সুপার শপে বাজার করে কিন্তু আপনি সারাদিন পা ধরে রাখলেও সে এক প্যাকেট ভাজা না এমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের প্যাকেট কিনবে না। একটা কারণ হচ্ছে সে নিজে চাকরি করে না তাই সে হুট করে আলগা কোন খরচ করবে না। দুই তার হাতে পর্যাপ্ত সময় এবং ধৈর্য্য আছে আলুর খোসা ছারিয়ে কেটে সাইজ করে ভাজার। দরকার হলে সে একত্রে অনেকগুলো আলু প্রথমে আধা ভাজা করে ডিপ ফ্রিজে তুলে রাখেন এবং পরে সেগুলা প্রয়োজন মত পরিমাণে নামিয়ে নামিয়ে ভাজেন। কিন্তু আমার হাতে টাকা আছে কিন্তু সময় নাই। আমার ধৈর্য্যও অনেক কম। আমি সুপার শপে গিয়ে আগে ফ্রোজেন ফুড সেকশন থেকে কিছু সেমি প্রোসেস ফুড কিনি। তাই আপনার টার্গেটেড কাস্টোমার হচ্ছি আমি। আমার মা নন।
কাস্টোমার টার্গেট করা আপনার নানান কারণে দরকার যেমন আজকে এক ভাই পোস্ট করেছেন উনি ছাতুর ব্যবসা করতে চান। উনি খুব ভালো একটা যুক্তি দিয়েছেন যে আগে তো ইসুবগুলের ভুষি প্যাকেটে বিক্রি হবে কেউ ভাবেনি এখন সেটা রীতিমত স্ট্যাব্লিস্ট বিজনেস। মনে রাখবেন আপনি যদি প্রোডাক্ট তৈরি করতে পারেন এবং সেটার মান ঠিক রাখতে পারেন তবে সেটা বিক্রি হবেই। মার্কেটিং এ একটা কথা আছে ‘প্রোডাক্ট ক্রিয়েটস ইট ওন ডিমান্ড।’ আগে মানুষ কোথাও গেলে বোতল ভরে পানি নিয়ে যেত তারও আগে পানির একটা মটকা নিয়ে যেত কারণ চলন্ত গাড়িতে আপনি পানি পাবেন কই? এখন একটা বোতল প্রায় সব জায়গায় কিনতে পাবেন। ছাতু ওয়ালা ভাইয়ের টার্গেটেড কাস্টোমার ডায়বেটিক্সের রোগিরা। উনি একটা ঝুড়িতে করেও যদি ছাতু নিয়ে সকাল সকাল বারডেম হাসপাতালের সামনে ফুটপাথে বসেন আমি লিখে দিতে পারব সেটা সোল্ড আউট হতে মাত্র ২ ঘন্টা লাগবে।
কাস্টোমার টার্গেট করতে পারলে আপনি জানতে পারবেন আপনার প্রতিদিন কত ইউনিট প্রোডাকশন করতে হবে। আপনার কাস্টোমারের মার্কেটে যাবার সময় কোনটা, কখন জিনিসটা মার্কেটে থাকতে হবে, আপনার টার্গেটেড কাস্টোমার কোন এলাকায় শপিং করছে। তারা কি ধুপখোলা মাঠের বাজারে যায় নাকি গুলশান ডিসিসিতে যায়। তারা কেমন প্যাকেজিং প্রেফার করে, তাদের আকৃষ্ট করার জন্য আপনার কেমন মার্কেটিং প্রোসিডিউর হতে হবে। এবং সবচেয়ে জরুরী যেটা তা হলো, সে আপনাকে এই প্রোডাক্টের জন্য আসলে কত টাকা দিতে রাজি আছে।
এই সবগুলো জিনিস আপনি যখন জানবেন তখন আপনি বুঝতে পারবেন আপনার প্রোডাক্টের কস্টিংটা ঠিক কিভাবে করতে হবে। আমি যখন সুপার মার্কেট চেইনের বিজনেস এ্যানালাইসিস করেছিলাম, আমি দেখলাম পিক সিজনেও তাদের আলুর দাম ২১ টাকা হয় বাজারে যার দাম ৬ টাকা। আমি খুঁজে বের করলাম, তাদের প্রতিটা স্টেপে এভাবেই কস্টিং করতে হচ্ছে যে তারা কিছুতেই ২১ টাকার কম রাখতে পারে না। প্লাস তাদের নিজস্ব কোন আলুর সাপ্লাই চেইন নাই। তারাও অন্যদের মত কাওরান বাজার থেকেই আলু নিচ্ছে। একটা সুপার মার্কেটের জন্য এটা খুব বড় সমস্যা না কারণ তাদের টাকা আসলে অন্য জায়গা থেকে উঠে আসে তারপরও তাদের কাছে হিসাব আছে যে তার কতজন কাস্টোমার এই দামেই আলু নিবে। তারা ঠিক ততটুকু আলু কিনে বা দোকানে রাখে। কিছুদিন পর তারা যখন লক্ষ্য করলো যে, না কাস্টোমার তারপরও অন্য জায়গা থেকে আলু নিচ্ছে এবং তাদের লস হচ্ছে। তারা কৃষকের সাথে কন্ট্রাক ফার্মিং এ আসলো এবং তারাও বাজারের দামে দিতে লাগল, সাথে সুপার মার্কেটে বাজার করার আরাম আয়েস তো আছেই। তাহলে বলুন কাস্টোমার কার থেকে আলু কিনবে? আবার বলছি বড় ব্যবসায়ীদের কিছুই যায় আসে না কয়েক লাখ টাকা লস হলে কিন্তু কখনও কখনও আপনার আমার মত নতুন উদ্যোগতাদের জন্য ঐটা তার সম্পূর্ণ মূলধনের থেকেও বেশি। তাই আমাদের ক্ষতির হিসাব খুব সাবধানে আগেই করে রাখতে হবে।
আজকের মত এই পর্যন্ত। নেক্সট আমি কথা বলব মার্কেট কম্পিটিশন নিয়ে। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য। কারো কোন বিষয়ে কিছু যোগ করার থাকলে বলতে পারেন আমি পোষ্টে যোগ করে দিবো।
আগের পর্ব : নতুন ব্যবসা শুরু : পর্ব – ১, প্রোডাক্ট প্লানিং।
পরের পর্ব : নতুন ব্যবসা শুরু : পর্ব – ৩, কম্পিটিশন এন্ড কম্পিটিটর।
- Written by: bdpreneur
- Posted on: May 12, 2018
- Tags: উদ্যোগ, টার্গেট কাস্টোমার, নতুন ব্যবসা, বিজনেস আইডিয়া, স্টার্টআপ