ব্যবসা করতে গেলে প্রায়শই একই সাথে চলে এমন দুই বা ততোধিক সমস্যার সামনে পড়তে হয়, যেখানে একটাকে ধরলে অন্যটাকে ছাড়তে হবে। আপনার ব্যবসার একটি সমস্যার সমাধানের জন্য আপনি সময় ব্যয় করবেন নাকি টাকা ব্যয় করবেন?
ধরেন আপনি সদ্য বিয়ে করেছেন। আপনি এবং আপনার সঙ্গী একজন আরেকজনকে বুঝতে চেষ্টা করেন, একে অপরকে সাহায্য করতে চেষ্টা করেন। আপনাদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। ফলাফল স্বরূপ ঘর ঝাড়ু দেওয়া থেকে নিজেদের রান্নার কাজ, কাপড় ধোয়ার কাজটাও নিজ হাতেই ভাগাভাগি করে করতে হয়। একজন কাজে সাহায্যকারী রাখার মত সামর্থ হয়ত আপনার নাই।
এবার চিন্তা করেন আরও পাঁচ বছরের পরের কথা, হয়ত আপনি এখন আপনার ব্যবসাকে দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন, আপনার সঙ্গীও ভালো কিছু একটা করছে। এখন কিন্তু সেই একই ঘর ঝাড়ু দেওয়ার কাজের জন্য আপনি কাজে সাহায্যকারী কাউকে রাখবার কথা চিন্তা করবেন। কারণ ৩০ মিনিট আপনার সঙ্গীর সাথে ভালো সময় কাটানোটা কাউকে কিছু টাকা খরচ করে কাজ করিয়ে নেওয়ার থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যবসাতেও ঠিক একই রকম অবস্থা আসে। শুরুতে হয়ত আপনাকেই আপনার প্রতিষ্ঠানের অনেক কাজ করতে হচ্ছে, হয়ত অফিস রুম মোছার মত কাজটিও করতে হচ্ছে। হয়ত ব্যবসা দাঁড় করাতে গিয়ে আপনার দিন রাত এর পিছনেই ব্যয় করতে হচ্ছে।
কিন্তু আপনার ব্যবসা যখন উন্নতির মুখ দেখবে, তখন কি হবে? আপনি হয়ত কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছেন ঠিক যে কাজটি আপনি করতেন তার জন্য। কেন? কারণ সহজ, আপনার হয়ত এখন সামর্থ্য আছে, হয়ত আপনি বুঝতে পারছেন যে কাজটি অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিলে আপনার যা ব্যয় হবে, তার থেকে আয়টা বেশীই হবে।
আপনি যাই করেন না কেন, আপনাকে ভেবে চিন্তা করতে হবে। যখনই আপনি অন্য কাউকে কাজে খাটাচ্ছেন, আপনাকে এর ‘অপারচ্যুনিটি কষ্ট’ হিসাব করতে হবে। একটি উদাহরণ টানি, আপনি একটি কাজ দু’জন কর্মী দ্বারা করিয়ে নিতে পারছেন। তাদের বেতন মাসে ১০ হাজার করে মোট ২০ হাজার টাকা। এখন তাদের করা কাজের ফলে আপনার ইনকাম ৫০ হাজার টাকা। আপনি হয়ত একটি ম্যাশিন কিনতে পারেন, যেখানে একজন লোক কম লাগবে, সাথে কাজ হবে দ্রুত এবং মাসে আরও বেশী পণ্য তৈরী করতে পারবেন। হিসাব করেন, যদি আপনার বিক্রয়ের সম্ভাবনা ঐ ৫০হাজার থেকে না বাড়ে, আর ম্যাশিনের পিছনেই মাসে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়, আপনি কি এই দিকে পা বাড়াবেন? কারণ খরচ তখন দাড়াবে ৩০হাজার, কিন্তু বিক্রি সেই ৫০হাজারই। আবার যদি বিক্রি ৭০ হাজার হয়ে যায়, আপনি কিন্তু এ দিকে আসতে চাইতেই পারেন।
‘অপারচ্যুনিটি কষ্ট’ এমন না যেটা আপনি আপনার সময়ের বিপরীতে আর একজন থেকে পাবেনই। এটা একটি মূল্যমান যা হয়ত আপনি আপনার করা কোন কাজ দিয়ে পেতে পারতেন। আপনি ব্যবসা করবেন, নাকি চাকুরী করবেন? আপনি ব্যবসা করলে কোন ব্যবসাটি করবেন? কোন ব্যবসায় টাকা ইনভেষ্ট করলে আপনার উন্নতির সম্ভাবনা বেশী? মাথায় রাখতে হবে, আপনি একটি সুযোগ গ্রহণ করার কারণে সব সময়ই অন্য একটি সুযোগ হারান। হয়ত অফিসের কম্পিউটারের জন্য একটি ভাল মনিটর কিনতে গিয়ে একটি ভালো প্রিন্টার কিনতে পারেন না, আবার হয়ত একটি ভালো প্রিন্টারের জন্য একটি ভালো মনিটর কিনতে পারেন না। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোনটিতে টাকা ঢালবেন। যদি প্রিন্টিং গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে মনিটরে যে টাকা খরচ করবেন, তা আসলে “নষ্ট” হবে। আবার যদি মনিটরটি বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে প্রিন্টারে খরচ করা বোকামী হবে।
আপনার হিসাব আপনাকে করতে হবে, আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজের হিসাব আপনাকেই ঠিক করতে হবে। আপনার প্রতিষ্ঠানের অফিসের স্থান হয়ত গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবুও ভালো শোনাবে চিন্তা করে মিরপুর ছেড়ে গুলশানে অফিস নিলেন, যেখানে ভাড়া ৩০হাজার টাকা বেশী। কিন্তু আপনি চাইলেই এই ৩০হাজার টাকা খরচ করে মিরপুরে থেকে আর একজন দক্ষ কর্মীকে নিয়োগ দিতে পারতেন।
বিলগেটস সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে, তাঁর হাত থেকে কলম পড়ে গেলে তিনি ঐ কলম আর তুলেন না; কারণ কলমটি তুলতে যে সময় লাগবে তার থেকে বেশী টাকা তিনি ঐ সময়েই আয় করছেন। কথাটি বাস্তব বা অবাস্তব যাই হোক, কথাটির পিছনে কিন্তু যুক্তি আছে। আবার দেখেন, সেই বিল গেটসই কিন্তু প্রচুর সময় ব্যায় করছেন বই পড়তে কিংবা বিভিন্ন স্থানে ইন্টারভিউ দিতে।
আপনার সময় এবং টাকা একান্তই আপনার। কিভাবে খরচ করবেন, কিভাবে চালাবেন, সেটা আপনিই সিদ্ধান্ত নিবেন। কিন্তু এখানে আপনাকে বিচক্ষণ হতে হবে, হতে হবে দুর্দান্ত হিসাবী।
- Written by: bdpreneur
- Posted on: June 30, 2018
- Tags: অপারচ্যুনিটি কস্ট, আত্মনির্মান, উদ্যোগ, প্রোডাক্টিভিটি, ব্যবসা বানিজ্য, সেলফ হেল্প, স্টার্টআপ