সোশ‍্যাল মিডিয়ায় কিছু ভুল, হতে পারে প্রতিষ্ঠানের জন‍্যে দুঃখের কারণ

ফেসবুক, টুইটার কিংবা লিঙ্কডইন ! এসময়ে এসে এই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেননি এমন মানুষ কিন্তু কমই আছে। ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কিং ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবসায়িক প্রয়োজনেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিজনেসের পরিচিতা বাড়াতে, পণ্য বা সেবার তথ্য দ্রুততার সাথে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তের ভোক্তাগনের কাছে পৌঁছে দিতে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা অপরিসীম।

সোশ্যাল মিডিয়ার যেমন ভাল দিক আছে তেমনি আছে খারাপ দিক। অবশ্য সেটা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উপর। ব্যবহারকারী কখন, কোথায়, কিভাবে ব্যবহার করবে তার উপর এর সুফল বা কুফল নির্ভর করবে। তবে যখন ব্যবসার জন্যে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করা হবে তখন মেনে চলতে হবে কিছু গ্রামার। নয়তো তা আপনার ব্যবসার জন্যে বুমেরাং হতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে সচারাচর আমরা ছোটখাটো কিছু ভুল করি। সেই ভুলগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারলে আমরা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে চমৎকার আউটপুট পেতে পারি। আজকের এই লেখায় আমরা সেই ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা করব। আসুন জেনে নেই সেই ভুল গুলো আর কিভাবে সেগুলোকে এভয়েড করে সোশ্যাল মিডিয়া এর ব্যবহার আরো পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি !

১. আগাম আপডেট ও চেকইনঃ

স্ট‍ার্টআপ গুলির মধ‍্যে এই আগাম আপডেট ও চেকইনের ঘটনা এত পরিমানে ঘটে যা বলবার মত না। আর এর কারণে হওয়া দুঃখের মাপটাও বেশ বড়। আপনি হয়ত বহু কষ্টে একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করবার জন‍্য একটি মিটিং সেট করেছেন। মিটিং এর আগেই পোস্ট দিয়ে দিলেন অমুক প্রতিষ্ঠানের সাথে মিটিং! ব‍্যাস, আপনি যাতে কাজটি না পান, তার জন‍্য আপনার প্রতিদ্বন্দী উঠে পড়ে লাগবে। হয়ত মিটিং এ গিয়েছেন, গিয়েই দিলেন চেকইন, একই ঘটনা ঘটতে পারে। মনে পড়ে, ২০১৬ সালে আমাদের পরিচিত এক ভাই একটি মাল্টিন‍্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের কাজের ওয়ার্ক ওর্ডার পাবার মাত্র ১ঘন্টার মধ‍্যে কাজটি হারায়। কারণ, তারা মিটিং শেষে তোলা ছবি তাদের পেজ এ দিয়েছিলো। আর ওয়ার্ক ওর্ডার এর মধ‍্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো যে পুরো কাজের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। কাজটি মাত্র কয়েক হাজার ডলারের ছিলো! যা ঐ প্রতিষ্ঠানের চলার জন‍্য অন্তত পক্ষে ৭/৮ মাসের টাকা এক ধাক্কায় যোগাড় করে দিতো। আরও এক প্রতিষ্ঠান এমন মিটিং এ গিয়ে চেক ইন দিলো। মিটিং চলাকালীন জানতে পারলো যে এই একই কাজের জন‍্য আরও দুইটি বড় কোম্পানি তাদের অফারটা এমনভাবে দিয়েছে যে তারা যাই বলুক না কেন, তার থেকেও কম খরচে করে দিবে।

আর এক ডিজাইনার ভাই কাজ পেয়েছিলেন বিদেশী একটি প্রতিষ্ঠানের লোগো রি-ডিজাইন করবার। ফেসবুকে একটি গ্রুপে উনি লোগোর ২/৩টি কনসেপ্ট আপলোড করে মতামত চাইলেন। এর মধ‍্যে কোন একজন তার সব কয়টি ডিজাইন নিজে কপি করে ঐ প্রতিষ্ঠানকে জমা দিলো। এবং সে আইডিয়া কোথায় পেয়েছে তাও শেয়ার করলো। এদিকে ঐ ভাই চার্জ করেছিলেন ৮০০ ডলার; আর যিনি কপি করেছেন, তিনি ১০০ ডলার দাবী করেন। ব‍্যাস, ঐ বিদেশী প্রতিষ্ঠান মূল কাজ যিনি করেছেন, তাকে সোজা জানিয়ে দিলেন যে প্রতিষ্ঠানের গোপনীয়তা ভঙ্গের দোষে তাকে আর কাজটি করতে হবে না; এবং এ নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি করলে তারা আইনী ব‍্যবস্থা নিতে বাধ‍্য হবে। হয়ত এই ভাই কিছু একটা করতে পারতেন, সেটা অন‍্য গল্প; কিন্তু তার যে লসটা হলো, সেটা কে পূরণ করবে?

তাই, অতি উত্তেজিত হবার কিছু নাই; ভেবে চিন্তে পোস্ট করেন।

২. ভুল সবই ভুলঃ 

সোশ‍্যাল মিডিয়ার অন‍্যতম প্রাণ হচ্ছে লেখা বা কন্টেন্ট। হোক সে ছোট, হোক সে বড়, হোক সে ভিডিও এর ভিতরে, হোক সে ছবির ভিতরে। কিন্তু এই কন্টেন্টই আপনার জন‍্য কাল হয়ে দাড়াতে পারে। কিভাবে? ধরেন আপনি যা লিখলেন, তার মধ‍্যে প্রচুর ভুল পাওয়া গেলো বা গ্রামারের ভুল থাকলো বা শব্দের ব‍্যবহারের ভুল থাকলো। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, ক্রেতা ভুল করতে পারে, কিন্তু বিক্রেতা নয়। আপনি হয়ত একটি পন‍্যের বিজ্ঞাপন লিখছেন, প্রাইস এর জায়গায় ভুলে প্রাইজ লিখে ফেললেন, যেই ভুলটা এখন এত বেশী চোখে পড়ে যে অনেকে এটাকে ভুল বলে স্বীকার করতে নারাজ। এখন এই প্রাইজ শব্দটি অনেক ব‍্যবহারের ফলে কিছু ক্রেতা হয়ত বিব্রত হবে না; তবে ‘কোয়ালিটি’ সম্পন্ন ক্রেতারা এক ঝটকায় আপনাকে ‘অশিক্ষিত’, ‘অদক্ষ’ অথবা ‘কেয়ার করেন না’ এমন ভেবে বসে থাকবে। আবার বাংলা কন্টেন্টের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায় ইংরেজী শব্দ দিয়ে বাংলা লেখা; এটাকে অনেকে বাংলিশ বলে। তবে এটার আর একটি ভার্সন আছে, ‘মুরাদ টাকলা’। অর্থাৎ বাংলা শব্দের উচ্চারণ ভুল ভাবে ইংরেজীতে লেখা। এটি আপনার পেজ এর থেকে ‘কোয়ালিটি সাবস্ক্রাইবার’ কমিয়ে দিবে দ্রুতই।

৩. অপ্রাসঙ্গিক পোষ্টঃ

প্রচুর ফেসবুক পেজ তাদের পেজ এ অপ্রাসঙ্গিক পোস্ট দেয় এটা চিন্তা করে যে তারা হয়ত এর ফলে পেজ এর সাবস্ক্রাইবারদের ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু আদতে হয় উল্টা! প্রায়শই মানুষ অপ্রাসঙ্গিক পোস্টের কারণে চলে যেতে বাধ‍্য হয়। ধরেন আপনি ব‍্যবসা করছেন ওয়েব ডিজাইনের। এখন আপনি সারাদিন বসে বসে যদি ‘ট‍্যাগ করুন সেই ফ্রেন্ডকে, যার মাথায় ঘিলু নাই’ টাইপের পোস্ট দিতে থাকেন, মানুষ বিরক্ত হবেই। কারণ এসব কাজ করবার জন‍্য অন‍্য পেজ আছে, তারা সেখান এসব দেখতে পাবে। আপনার পেজে আপনাকে দিতে হবে আপনার ব‍্যবসার প্রাসঙ্গিক পোস্ট, সেটা কৌতুকও হতে পারে, তবে প্রাসঙ্গিক হতে হবে।

৪. ব‍্যত্তিগত অভিমতঃ

প্রায়শই দেখা যায় অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক নিজের পারসোনাল প্রোফাইল আর নিজের ব‍্যবসায়িক পেজ এর মধ‍্যে গুলিয়ে ফেলেন। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে; আপনার ব‍্যবসায়িক পেজে আপনি অবশ‍্যই এমন কিছু দিবেন না, যেটা সাধারণ সবার চোখে এক রকম নাও হতে পারে। যেমন, আপনার পেজ থেকে কোন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সাপোর্ট করে লেখা উচিৎ নয়, কোন ধর্মকে টার্গেট করে বা কোন ধর্মের পক্ষে বাড়াবাড়ি রকম পক্ষপাতিত্ব করে পোস্ট করা, দেশ-বিদেশের এমন কোন ঘটনা যা নিয়ে মানুষ এমনিতেই দ্বিধাবিভক্ত ইত‍্যাদি। এতেকরে আপনার মতের সাথে যাদের মিলে, তারা হয়ত থাকবে, কিন্তু যারা মতের সাথে মিলাতে পারবে না; তারা কি থাকবে?

৫. অতিরিক্ত মাত্রায় হ‍্যাশ ট্যাগঃ

বাংলাদেশের বেশীর ভাগ পেজই হ‍্যাশ ট‍্যাগ এর ব‍্যবহার করেই না বলা চলে, আবার কিছু পেজ কথায় কথায় হ‍্যাশ ট‍্যাগ দেয়। তারা মূলত না বুঝে দেয়। একটা লেখা দেখতে একটু অন‍্য কালারের দেখাবে এই চিন্তা থেকে দেয়। কিন্তু এটা করতে গিয়ে অহেতুক আন্ডার স্কোর (__) ব‍্যবহার করতে হয়, ফলে লেখাটা বাজে দেখায়। আবার অনেকে প্রায় প্রতিটি আলাদা শব্দে হ‍্যাশ ট‍্যাগ বসায়, ফলে এটাও বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়ায়। তাই, শুধুমাত্র দরকারী জায়গায় হ‍্যাশ ট‍্যাগ ব‍্যবহার করুন।

৬. ছবির ব‍্যবহারঃ

বেশীর ভাগ প্রতিষ্ঠানের বাড়তি কোন গ্রাফিক ডিজাইনার নাই। আর তাই ছবি ব‍্যবহারে যথা-সচেষ্ট নয় অনেক প্রতিষ্ঠানই। কিন্তু এটা একদম ঠিক নয়। ছবি, তার উপর লেখা এগুলো ব‍্যবহারে একটু সুন্দর ও মার্জিত হওয়া বেশী দরকারী, এতে সব ধরণের পাঠকের জন‍্য সুবিধা হয়। অহেতুক অতিরিক্ত রং, অতিরিক্ত ডিজাইন পরিহার করা বাঞ্চনীয়।

সোশ‍্যাল মিডিয়া আপনার প্রতিষ্ঠান কে এগিয়ে নেবার জন‍্য সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে, যদি আপনি এর ব‍্যবহার সঠিক ভাবে করে থাকেন। ব‍্যবহার ভুল হয়ে গেলেই বিপদ। তাই, সাবধানের মার নাই ধরে সাবধানেই এগিয়ে যান।

Leave a Reply