আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্যে কেমন কর্মী প্রয়োজন?

একটি উদ্যোগ এর জন্য কি ধরনের কর্মীবাহিনী প্রয়োজন ? দক্ষ কর্মীবাহিনী নাকি বিশ্বস্ত কর্মীবাহিনী ? এ বিষয়ে কোনটিকে আপনি অগ্রাধিকার দিবেন ? কেনই বা অগ্রাধিকার দিবেন । 

একজন দক্ষ কর্মী আপনার প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে এ বিষয়ে কোন দ্বিমত করার সুযোগ নেই । কিন্তু সেই দক্ষ কর্মীটিই যদি সৎ না হয়, তাহলে কি আপনার প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি বাধার সম্মুখীন হবে না ?

আবার একজন বিশ্বস্ত কর্মী আপনার প্রতিষ্ঠানকে হয়তো কোন ক্ষতির সম্মুখীন করবে না, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের যে অগ্রগতি সেই অগ্রগতিতে যদি ভূমিকা রাখতে না পারে তাহলে সেই কর্মী কি আপনার প্রতিষ্ঠানের কাছে এক সময় বোঝা হয়ে যাবে না ? বা আপনার প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির বাধা হিসাবে বিবেচিত হবে না ?

তাহলে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কি ধরনের কর্মী বাছাই করবো বা কোন ধরনের কর্মীকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়োগ দিবো ? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আর মরুভূমিতে পানি খোঁজার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য আছে কি ? মনে হয় নেই। কারন এই প্রশ্নের উত্তর একেক জনের কাছে একেক রকম । কেও হয়তো বলবে দক্ষকর্মী আবার কেও হয়তো বলবে বিশ্বস্তকর্মী ।

আসলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাজ যেমন ভিন্ন, ঠিক তেমনি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা যার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়, তিনিও কিন্তু ভিন্ন । ফলে একেক জনের নেতৃত্ব প্রদানের গুনাবলী, নেতৃত্বের ধরন, নেতৃত্বের চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে ।

একটি প্রতিষ্ঠান সঠিক সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য সঠিক নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই ।

জিনতত্ত্ববিদ এলান কিথ এর মতে “নেতৃত্ব হল মানুষের জন্য একটি পথ খুলে দেওয়া যাতে তারা কোনো অসাধারণ ঘটনা ঘটানোর ক্ষেত্রে নিজেদের অবদান রাখতে পারে” ।

সহজভাবে যদি ‘এলান কিথ’ এর কথাটি বলি তাহলে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনিই হলেন সঠিক একজন নেতা যিনি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমন একটি পরিবেশ তৈরী করবেন যেখানে একজন দক্ষ কর্মী চাইলেই অসৎ হতে পারবে না বা একজন বিশ্বস্ত কর্মী নিজে নিজেই পরিবেশগত কারনে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলবেন এবং উভয়ই প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবেন ।

নেতৃত্বের বিভিন্ন ধরন প্রচলিত আছে একেকজন নেতার নেতৃত্বের ধরন একেক রকম হয় । যেমন : একনায়কত্ব, স্বৈরাচারী , অংশগ্রহণকারী, অবাধ-স্বাধীনতা প্রদানকারী ইত্যাদি।

কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য কি ধরনের নেতৃত্ব প্রয়োজন হবে সেটা নির্ভর করবে প্রতিষ্ঠানের কাজের উপর । তবে প্রতিষ্ঠানের কাজ যে ধরনেরই হোক না কেন কিছু বিষয়ে সব প্রতিষ্ঠানের নেতাকে খেয়াল রাখতে হবে আর এর মধ্যে অন্যতম হলো, প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মীদের মধ্যে এমন একটি দলীয় উদ্দীপনা তৈরী করা যাতে করে সবাই সেই প্রতিষ্ঠানকে নিজের বলে মনে করে এবং দলীয় উদ্দীপনার মাঝে দক্ষ-অদক্ষ, সৎ-অসৎ সবাই মিলে প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির জন্য কাজ করবে ।

www.bn.wikipedia.org তে একটি প্রতিষ্ঠানের দলীয় বৈশিষ্ট্য কি ধরনের হতে পারে সে বিষয়ে চমৎকার ভাবে বলা আছে ।

দলের সব সদস্য একতার ব্যাপারে সচেতন থাকবেন। আন্তঃব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতেই হবে। সদস্যদের নিজেদের অবদান রাখা, অন্যের কাছ থেকে শেখা এবং অন্যদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। একটি সাধারণ লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য অন্য সদস্যদের সাথে একসঙ্গে কাজ করার ক্ষমতা থাকতেই হবে।

একটি উন্নত ক্রিয়াশীল (Active) দলের কিছু বৈশিষ্ট্য:

        • অভিপ্রায়: একটি দল গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা এবং নিজে সেই দলের একজন সদস্য হতে পেরে অন্যদের সাথে সাথে নিজে গর্ববোধ করা এবং সকলে মিলে দলের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে নিবেদিতভাবে কাজ করে যাওয়া ।
        • অগ্রাধিকার: এর পর কী করতে হবে, তা কে করবেন, এবং কোন সময়ের মধ্যে দলের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে তা সকল সদস্যদের জানা থাকতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে ।
        • ভূমিকা: কাজ সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে দলের সদস্যদের ভূমিকা কী হবে সদস্যদের তা জানান, এবং কখন আরও দক্ষ একজন সদস্যকে একটি বিশেষ কাজ করার সুযোগ দিতে হবে তাও দলের সদস্যদের জানা থাকতে হবে । অর্থাৎ কে? কোন সময়ে? কি ভুমিকা পালন করবেন বা করা উচিৎ সে বিষয়ে সকল সদস্যদের অবগত থাকতে হবে /রাখতে হবে ।
        • সিদ্ধান্ত: কর্তৃত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সীমা সম্পর্কে স্পষ্ট প্রত্যেক দলীয় সদস্যের সুস্পষ্ট ধারনা থাকতে হবে । যাতে করে কোনভাবেই কনফ্লিক্ট অফ ইনটারেস্ট দেখা না দেয় ।
        • বিরোধ: সমস্ত বিরোধের মোকাবিলা খোলাখুলিভাবে করতে হবে, এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে বিরোধকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাধা বলে মনে করা হয়।
        • ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য: প্রত্যেক দলীয় সদস্যই যাতে মনে করেন যে, তাঁদের অভিনব ব্যক্তিত্বকে  প্রশংসা করা হয় ।
        • নিয়মনীতি: একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে দলীয় নিয়মনীতি স্থির করা এবং দলের প্রত্যেক সদস্য তা অবশ্যই মেনে চলবে।
        • কার্যকারিতা: দলীয় সদস্যের প্রত্যেকে যাতে দলীয় বৈঠককে দক্ষ ও উৎপাদনশীল/কার্যকর বলে মনে করেন এবং একত্রিত হওয়ার এই সময়টুকুর জন্য প্রতিক্ষা করেন।
        • সাফল্য: দল কখন, কি বিষয়ে, কখন সফল হয়েছে, তা সদস্যের স্পষ্টভাবে জানানো এবং তা সবার সঙ্গে সমানভাবে ও গর্বের সাথে ভাগ করে নেয়া।
        • প্রশিক্ষণ: সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য প্রদানের সুবিধা এবং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ এর আয়োজন করা এবং প্রত্যেক দলীয় সদস্যরা সেই সুযোগটি যথাযথ ভাবে যেন কাজে লাগান।

      এখন আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে ,কখন, কিভাবে , কি কৌশলে, আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানকে নেতৃত্ব প্রদান করবো ।

Leave a Reply