‘ইনবক্সে জানান’ বনাম বিক্রিপাগলা কোম্পানি: আপনি কি যথেষ্ট করছেন?

‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ গ্রুপে আমার প্রথমদিকের একটি অভিজ্ঞতা টা খুব মজার। একটা জরুরি কাজে আমার বাল্ক এসএমএস কেনার দরকার ছিল, আমি গ্রুপে পোস্ট দিলাম। অনেক কমেন্ট পেলাম, যার বেশির ভাগেরই কথা হচ্ছে ‘এটি আমি দিতে পারব, আপনার প্রয়োজনটি ইনবক্সে জানান’। একজন ব্যতিক্রম, তিনি কমেন্টের ঝামেলায় গেলেন না, সরাসরি আমাকে মেসেজ করলেন, ‘ভাই, আমার নাম অমুক, আমি আপনাকে এই সার্ভিসটি দিতে পারব। এই এই রেট পড়বে’-একই সঙ্গে তিনি ইনবক্সে আমাকে তাঁর ভার্চুয়াল ব্রোশিওরটিও মেইল করে দিলেন।

বলা বাহুল্য আমি চটপট উনার সঙ্গে চ্যাটবক্সে বাকি আলাপ সেরে নিলাম, ১০ মিনিটের মধ্যে অর্ডার প্লেস হয়ে গেল, ডিল ফাইনাল। অন্যদিকে তখন বাকিরা মূল পোস্টের কমেন্টে ‘আমাকে ইনবক্স করুন’ বলে কমেন্ট করেই যাচ্ছেন!

হ্যাঁ, এই জায়গাটাতেই আমি কথা বলতে চাচ্ছি।

আমাদের দেশের বেশির ভাগ নতুন উদ্যোক্তাদের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে নিজেদেরকে সেল ড্রিভেন কোম্পানি (আমি বিক্রি পাগলা কোম্পানি কথাটি বলতে পছন্দ করি) হিসেবে তৈরি না করা। এখানেই ব্যবসা মার খায়, অথবা ঢিমে তালে চলতে থাকে, অথবা আপাত দৃষ্টিতে ভালো চললেও আসলে হয়তো মূল সম্ভাবনার সিকি অংশও হয় না।

বিক্রিই ম্যাটার করে, আর কিছু না:

একজন উদ্যোক্তার প্রধান কাজ হচ্ছে ক্রমাগত বাজার খুঁজে যাওয়া। যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই – না উড়ালে ব্যবসা মিলবে না। বিক্রি প্রচেষ্টার দিক থেকে উদ্যোগ ৩ ধরনের।

১. নতুন প্রোডাক্টের জন্য নতুন ক্রেতা খোঁজা।
২. পুরনো প্রোডাক্টের জন্য নতুন ক্রেতা খোঁজা।
৩. পুরনো ক্রেতাকে নতুন নতুন প্রোডাক্ট বিক্রি করা।

আমার পছন্দ তৃতীয়টি।

এখানে এই বাল্ক এসএমএস এর উদাহরন দিয়েই এগিয়ে যাই। ধরা যাক, যিনি আমার কাছে বাল্ক এসএমএস বিক্রি করেছেন, তিনি ভালোই বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু সম্ভাবনা এখানেই শেষ ছিল না।
তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতেন যে আমি কী কাজে এই এসএমএস ব্যবহার করব।
আমি ব্যবহার করছিলাম রোটারি ক্লাবের দেশব্যাপী একটি নির্বাচনের কাজে, প্রার্থীর পক্ষ থেকে নিয়মিত সবাইকে যুক্ত রাখার ও ভিজিবিলিটি বজায় রাখার জন্য।
তাহলে এখান থেকে তিনি দুইটি বুদ্ধি পেতে পারেন।
প্রথমটি হচ্ছে দেশে রোটারি ক্লাব কয়টি? উত্তর: আড়াইশ!
তাহলে এই আড়াইশ ক্লাবের সবারই এমন সার্ভিস লাগতে পারে হয়তোবা। এদের সঙ্গে যোগাযোগ করার উপায় কী? গুগল করলে পাবেন।
আড়াইশ ক্লাবে যোগাযোগ করুন, যদি ১০%কেও প্রোডাক্ট দিতে পারেন, তাহলে
সম্ভাবনা হচ্ছে আপনি আরো ২৫টি জায়গায় এটি বিক্রি করতে পারলেন।

তারপর আসুন, ‘নির্বাচন’ নিয়ে ভাবা যাক।
রোটারি ক্লাবের নির্বাচনে এসএমএস ব্যবহৃত হতে পারলে লায়ন্স ক্লাবের নির্বাচনে কেন নয়?
বিজিএমইএ, বিকেএমইএতে কেন নয়?
কেন নয় বাংলাদেশের প্রতিটি মেডিকেল এসোসিয়েশনের নির্বাচনে, ৬৪টি জেলায়?
রিহাবের নির্বাচনে, দেশের সব আইনজীবি সমিতির নির্বাচনই বা বাদ যাবে কেন?
দেশের সবগুলো মার্কেট সমিতি, অন্যান্য ক্লাব-এসোসিয়েশনে খোঁজ নিয়ে অফার করতেই বা বাঁধা দিচ্ছে কে?

তাহলে কি দেখলেন যে একটি বিক্রি কীভাবে অযুত সম্ভাবনা তৈরি করে দিচ্ছে!
ভাবছেন, বেশ তো ব্যবসা করা গেল।
উহু, এখানেই শেষ নয়।
এখন এদের কাছে নতুন প্রোডাক্ট বিক্রি করুন।
নির্বাচনের জন্য টিশার্ট দিন। নিদেন পক্ষে নির্বাচনী ওয়েবসাইট কিংবা তাঁদের সমিতি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট তৈরির চেস্টা করেই দেখুন না।
তাঁদের কী সফটওয়্যার লাগে না ব্যবসা চালাতে? দুয়েকটি বানিয়ে দিতে পারবেন না?

জ্বি, এভাবেই ব্যবসার যোগাযোগ তৈরি হলে সেখান থেকে নতুন নতুন ব্যবসা আনার দিকে মনোযোগ দিন।
আমার মতে উদ্যোক্তাদের প্রধান কাজগুলোর প্রথম ৫টি মনে রাখা সব উদ্যোক্তার জন্য জরুরী।
কাজগুলো হচ্ছে-বিক্রি, বিক্রি, বিক্রি, বিক্রি, বিক্রি।

লেখক : আরিফ জেবতিক
প্রকাশ : চাকরি খুঁজবো না চাকরি দেব গ্রুপ।

Leave a Reply