অনেকেই ইতোমধ্যে ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। অন্যান্য সেক্টরে খরচ করে শেষ পর্যন্ত দেখা গেল মার্কেটিংয়ের জন্যে খুব একটা বাজেট নাই। কিন্তু ব্যবসার স্বার্থে, ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্যে কিছু ঢাকঢোল তো পিটাতে হবে। কম তেলে মচমচে ভাজা চাইলে অবশ্যই কিছু কৌশলের আশ্রয় নিতে হবে। নিজেকে ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। শুরুতেই হয়ত নিউজ পেপার এড, লিফলেট, ফ্ল্যায়ার, পোস্টার, ব্যানার তৈরী করে অনেক খরচ করেও কাঙ্খিত ফলাফলের মুখ দেখতে পাবেন না। এখনকার সময়ে কৌশলী না হলে আর গতানুগতি মডেল থেকে বাইরে আসতে না পারলে সফলতার গতি ধীর হয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। আপাতত কিছু কৌশল জানতে এবং প্রয়োগ করতে ফলো করতে পারেন আমার টিপসগুলো –
০১) ব্যবসার শুরুতেই একটা লঞ্চিং প্রোগ্রাম করেন। এটা হতে পারে আপনার অফিসে বা কোন রোস্তোরায়। এই প্রোগ্রামে এমন লোকজনকে দাওয়াত করুন যারা আপনার ব্যবসায় পরবর্তীতে কাজে লাগবে। অবশ্যই ২/৩ জন সাংবাদিক বন্ধু বান্ধব রাখবেন। বুফে আইটেমের ব্যবস্থা করুন। অথবা সন্ধ্যায় চা নাস্তা। ২০ জন নিয়ে যদি প্রোগ্রাম হয় তাহলে আপনি মোটামুটি ১০ হাজার টাকায় সেরে ফেলতে পারবেন।
০২) প্রোগ্রামে অবশ্যই একটা বিজসেন প্রেজেন্টেশন রাখবেন। খাওয়া দাওয়ার শুরুতেই প্রেজেন্টেশনটা দিয়ে দেয়া জরুরী।
০৩) প্রোগ্রামে আসা অতীথিদের ছোট-খাটো কিছু উপহার দিতে পারেন। তা হতে পারে, কার্ড হোল্ডার, চাবির রিং অথবা টি-শার্ট। এগুলো গতানুগতিক উপহার সামগ্রী। চেষ্টা করুন আউট অব দ্যা বক্স কিছু দিতে। এতে করে সে আপনাকে মনে রাখবে দীর্ঘদিন। সাথে অবশ্যই আপনার কোম্পানির ভিজিটিং কার্ড, ব্রশিউর ইত্যাদি দিতে ভুলবেন না।
০৪) প্রোগ্রাম শেষে একটা প্রেস রিলিজ তৈরী করুন। টার্গেট করুন অনলাইন মিডিয়াগুলোকে। এগুলোতে প্রেস রিলিজ পাবলিশ করানো সহজ।
০৫) আপনার প্রোগ্রামে আসা সাংবাদিকদের সাথে পরবর্তী দিনে একটু হাই হ্যালো করুন যেন আপনার নিউজটি পত্রিকায় আসে। পত্রিকায় এলে তাদের ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না।
০৬) আপনার ব্যবসা শুরুর গল্প থেকে ধরে নিয়মিত সকল বিষয়ে ব্লগিং করুন। প্রোগ্রামের খবর, প্রেস রিলিজ ছাপা হলে তার লিংক, নতুন প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের খবর সব কিছুই নিয়মিত ব্লগে পাবলিশ করুন।
০৭) আপনার ফেসবুক প্রোফাইলেও অনুরূপ একটি ভিটিস চালু রাখুন।
০৮) ব্যবসার শুরুতে একটি ফেসবুক পেইজতো খুলবেনই। সেখানেও অনুরূপ একটি ভিটিস চালু রাখুন। ফেসবুক পেইজটি সদা পরিচ্ছন্ন, তথ্য নির্ভর এবং আপডেট রাখুন।
০৯) প্রতিদিন ফেসবুক পেইজে এবং ই-মেইলে আসা কুয়েরিগুলোকে সিরিয়াসলি নিয়ে রিপ্লাই দিতে চেষ্টা করুন। প্রতিটা রিপ্লাইয়ের সাথে আপনার লগো, আইডেন্টেটি ইত্যাদি সংযুক্ত করে দিতে ভুলবেন না।
১০) বিক্রয়.কম, সেলবাজার.কম এ বিজ্ঞাপন দিন। নিয়মিত বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে বিজ্ঞাপন পাবলিশ করুন। নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনও এই সাইটগুলোতে দিতে পারেন। বিজ্ঞাপন দিতে পারেন বিডিজবস.কম বা প্রথম আলো.কমেও।
১১) ই-কমার্স সাইটগুলোর মাধ্যমে আপনার পণ্য ও সেবা বিক্রির চেষ্টা করুন। বিজ্ঞাপন দিতে পারেন তাদের সাইটেও। সাইটগুলোর সাথে জয়েন্ট প্রমোশনার একটি ভিটিসও চালু করতে পারেন। সুযোগ নিন ডিল সাইটের মাধ্যমেও।
১২) আপনার বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে যাদের ফেসবুক ফ্যানপেইজ আছে তাদের সবার সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে তাদের ফ্যানপেইজের মাধ্যমে প্রমোশন চালান। যাদের ওয়েব সাইট আছে এবং সাইটে মোটামুটি ট্রাফিক আছে তাদের সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চেষ্টা করুন। বিনিময়ে টাকা নয় অন্য কোন সেবার বিনিময়ে একটা উইন-উইন সিচুয়েশন ক্রিয়েট করুন।
১৩) কিছু বাল্ক এসএমএস কিনে নিন। আপনার ২০ জন বন্ধুর সবার মোবাইল থেকে সব নাম্বার সংগ্রহ করুন। সেই নাম্বারগুলোতে এসএমএস পাঠান। টার্গেট ক্লায়েন্টের ডেটাবেস থাকলে তাদেরও নিয়মিত এসএমএস পাঠান।
১৪) এসএমএসের মত করে ই-মেইল আইডি সংগ্রহ করে ই-মেইল করুন। নিয়মিত আপনার সেবা সর্ম্পকে সবাইকে আপডেট জানান।
১৫) স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশীপ বাড়ান। বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের বিভিন্ন কর্মসূচীকে আপনার প্রমোশনের জন্যে ব্যবহার করুন। বিভিন্ন মেলায় নিজেদের শোকেসিং করুন।
১৬) বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে মূল্যছাড়, প্রতিযোগিতা ইত্যাদির আয়োজন করুন। বিভিন্ন বড় কোম্পানির সাথে জয়েন্ট প্রমোশনের চেষ্টা করুন।
১৭) কমিউনিকেশন, নেটওয়ার্ক আর কানেকটিভিটি বাড়ান। যেখানেই যাননা কেন আপনার ব্যবসায়িক পরিচয় দিতে দ্বিধা বোধ করবেন না। সব যায়গায় একটা উইন-উইন মডেল ডেভলপ করতে চেষ্টা করুন।
১৮) কোন ক্লায়েন্টের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করার নামে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়াবেন না। স্মার্টলি ক্লায়েন্টের রিকোয়ারমেন্ট শুনুন। তাকে একটা ভাল সাজেশন দিন। তাকে ভাবতে দিন। এবার নিজেকে প্রেজেন্ট করুন যে, আপনি চাইলে এই কাজগুলো আমি করে দিতে পারব। আপনার অফার আপনি তাকে দিয়ে দিন। এবং সিদ্ধান্ত নিতে সময় দিন।
১৯) ক্লায়েন্টের সাথে ব্যবসার বাইরেও কিছু রিলেশন তৈরী করুন। এক্সটা মাইল হাঁটার অভ্যাস করুন। সব সময় কিছু এক্সট্রা দিতে চেষ্টা করুন। মানুষ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পেলে নির্ভরশীল হয়ে পরে। আর তার নির্ভরশীলতাই আপনার ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
২০) কোয়ালিটি, প্রাইস, সার্ভিস, কমিটমেন্ট আর রিলেশনশীপ এই পাঁচটি বিষয়ে কোন কম্প্রোমাইজ করবেন না। ক্লায়েন্টের ডিমান্ড অনুযায়ী উপরিউক্ত বিষয়গুলোর উপর সদা নজর দিতে চেষ্টা করুন।
- Written by: bdpreneur
- Posted on: May 9, 2018
- Tags: উদ্যোগ, বাজেটিং, বিপনন ও বিক্রয়, ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, স্টার্টআপ