ছোট ব‍্যবসায় “চাপ” সামলানোর ৫ উপায়

ব‍্যবসা মানেই এর উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠাতার উপর ছোট হোক বড় হোক, একটি মানসিক চাপ! আর ছোট ব‍্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন‍্য এই চাপ যেন আরও বেশী। টাকার সমস‍্যা, যোগ‍্য লোকবলের সমস‍্যা, বিক্রয় সমস‍্যা, বিজ্ঞাপন ও বিপননে সমস‍্যা, বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানে সমস‍্যা সহ এমন আরও কত কি “চাপ” থাকে ছোট ব‍্যবসায়ীদের মাথার উপরে। আর সেগুলি থেকে যদি আপনি নিজেকে বাঁচিয়ে না রাখতে পারেন, তাহলে আপনার জন‍্য কিন্তু এটি ভয়ানক ক্ষতির কারন হয়ে উঠতে পারে।

আর তাই, ছোট ব‍্যবসায় “চাপ বা স্ট্রেস” সামলানোর ৫টি উপায় নিয়ে আলোচনা করবো আজকে।

১. মাথায় রাখুন, কি কি ঠিক হচ্ছেঃ

আপনার ব‍্যবসা করতে গিয়ে কি কি ভুল হচ্ছে, কি কি সমস‍্যা আছে এগুলি বের করা তেমন একটা কষ্টের বিষয় নয়। আর ভুল ও সমস‍্যা যত সামনে আসবে, ততই আপনার উপর চাপ বাড়বে। কিন্তু আপনার উচিৎ হবে কি কি ঠিক আছে বা ঠিক মত হচ্ছে সেটার দিকে আগে ‘ফোকাস’ করা। এর মাধ‍্যমে আপনি সহজেই আপনার নিজের শক্তিকে আরও শক্তিশালী করতে পারবেন। মাথায় রাখবেন ব‍্যবসা করতে গেলে যে SWOT এনালাইসিস করা লাগে, তার প্রথমেই কিন্তু S অর্থাৎ strength আসে; আর সেখানেই আপনাকে ফোকাস হতে হবে। আপনার প্রতিষ্ঠানের ভালো দিকগুলো যাতে সহজে নষ্ট না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ‍্য রাখুন। আর কেউ ভালো বললে সেটার প্রচারের ব‍্যবস্থা করুন, সেটাতে ফোকাস আনুন।

২. গুরুত্ব অনুযায়ী কাজকে অগ্রাধিকার দিন ও সম্পন্ন করুনঃ

ছোট ব‍্যবসার ক্ষেত্রে কাজ বলতে করবার থাকে অনেক, কিন্তু লোকবল থাকে কম। বড় ব‍্যবসাতেও এমন থাকে, তবে তাদের কাজ সামলানোর জন‍্য অতিরিক্ত জনবল থাকে, সাধারণত। তাই আপনার ছোট ব‍্যবসাকে এগিয়ে নিতে আপনাকে কাজের গুরুত্ব আগে দেখতে হবে। দিনের শুরুতে কাজের লিষ্ট তৈরী করে নিন। এরপর সেট করুন কোনটা কখন খুব বেশী জরুরী। এখানে কাজ সাজিয়ে নেওয়া আপনাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলিকে আগে করবার সুযোগ করে দেয়; আর দিন শেষে আপনার কাজ কতদুর এগুলো, সেটাও নির্ধারণ করা সহজ হয়ে যায়।

৩. ব্রেইন কে শান্ত করুনঃ

ব‍্যবসা করতে গেলে এমন কিছু সময় আসে, যে সময়ে আপনি কোন ভাবেই আপনার ব‍্যবসার কথা মাথা থেকে বের করতে পারবেন না। সাধারণত ব‍্যবসায় যখন কোন সংকট বা সমস্যা সৃষ্টি হয় তখন এই বিষয়টা যেন মাথায় জেঁকে বসে। এমনকি ঘুমাতে গেলেও দেখা যায় আপনার মাথা ফ্রি হচ্ছে না। ঘুম তো অনেক দূরের বিষয়।

এই সমস‍্যা সমাধানে আপনাকে একটু ট্রিক করতে হবে; সাধারণভাবে দেখলে এ পদ্ধতিটি হাস‍্যকর, তবে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন এটা কার্যকর। আপনাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে, পুরো সমস‍্যাটি ভালো করে লিখে ফেলতে হবে। সাথে সাথে এখন পর্যন্ত যে যে সম্ভাব‍্য সমাধান খুঁজে পেয়েছেন সেগুলি। এই কাজটি করলে মনোবিজ্ঞানীদের মতে আপনার ব্রেইন একটু হলেও শান্ত হবে; আর আপনার রাতের ঘুমও একেবারে লাপাত্তা হয়ে যাবে না।

৪. বিশ্রাম নিনঃ

চাপ থাকবেই; সেটা যতই কঠোর পরিশ্রম করুন না কেন। কিন্তু চাপের যন্ত্রনায় আপনি যদি একদম ভর্তা হয়ে যান, সেটাই বিপদের। তাই মাঝে মধ‍্যে আপনাকে বিশ্রাম নিতে হবে। সমস‍্যা সমাধান করতে গিয়ে লম্বা সময়ও কাজ করা উচিৎ নয়। এমনকি ৫-১০ মিনিটের জন‍্য হলেও একটু বিশ্রাম নেওয়া অনেক কাজে দিবে। তবে বিশ্রামের সময়টাতে মাথা থেকে সমস‍্যার চাপ সরিয়ে রাখতে সচেষ্ট হোন। এ জন‍্য একটু হাঁটাহাঁটি করতে পারেন, কফি পান করতে পারেন, হয়ত কোন বন্ধুকে ফোন দিয়ে একটু গল্প করে নিতে পারেন। অথবা চাইলে একটি দুইটি ফানি ভিডিও দেখে নিতে পারেন, শুধু নিশ্চিত করেন যে ব‍্যবসা সংক্রান্ত কিছু করছেন না।

৫. নিজের যত্ন নিনঃ

প্রত‍্যেক ব‍্যবসায়ীর জন‍্য শরীর ভালো রাখা খুব বেশীই জরুরী। আর ছোট ব‍্যবসার মালিকদের জন‍্য তো এটি আরও জরুরী। কারণ এখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনাকেই সরাসরি মাথা ঘামাতে হয়। তাই আপনার নিজের প্রতি যত্নশীল হোন। আজকে হয়ত বিনা বিশ্রামেই না ঘুমিয়ে টানা ২০-২৫ ঘন্টা কাজ করতে পারছেন। কিন্তু এমনটা করতে থাকলে এক সময় দেখা যাবে না ঘুমিয়ে ৮-১০ ঘন্টা কাজ করাও কষ্টের হয়ে যাচ্ছে। প্রচুর পানি পান করা, সকালে একটু ব‍্যয়াম করা, দ্রুত ঘুমাতে যাওয়া এবং দ্রুত ঘুম থেকে ওঠা ইত‍্যাদি ভালো অভ‍্যাস গুলি গড়ে তুলুন। নিজে শান্তিতে থাকুন, ব‍্যবসাকেও রাখুন শান্তিতে!

Leave a Reply