সফলতার জন্য কর্মদক্ষতার গুরুত্ব এত বেশী কেন? কারণ, আপনি আপনার জীবনে যত সিদ্ধান্ত নেন, এর মধ্যে কর্মদক্ষতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশেই কাজে লাগে। এটি আপনার কাজের ফলাফলকে ভালো হতে সাহায্য করে। আর এ কারণেই সফল ব্যক্তিদের মধ্যে এই কর্মদক্ষতার উপর জোর দিতে দেখা যায় বেশ ফলে তাঁদের কাজ হয় আরও বুদ্ধিদীপ্ত, এবং সময় নষ্ট হয় কম।
আর এই কর্মদক্ষতার শিখরে যারা চড়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের জীবন ঘাটলে দেখায় ৮টি দারুন অভ্যাসের, যেগুলি তাঁরা আয়ত্ত্ব করেছেন প্রায় সবাই। আর সেগুলি নিয়েই আজকের আলোচনা।
১. স্বপ্নদ্রষ্টাঃ
প্রায় সকল প্রভাবশালী উদ্যোক্তাই তাঁদের দিনের একটি বড় সময় কাটান চিন্তা এবং ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে সেটা নিয়ে ভেবে। তাঁরা স্বাভাবিক ভাবেই একটু বেশী উদ্ভাবনী এবং সৃজনী ধাঁচের। তাঁরা তাদের এই ‘চিন্তা শক্তি’কে তাদের সবচাইতে দামী সম্পদ বলে মনে করেন। এখানে বাংলাদেশের একজন নাম করা তরুন উদ্যোক্তা মাহমুদুল হাসান সোহাগ ভাইয়ের কথা বলতেই হয়, যিনি উদ্ভাস, উন্মেষ, টেকশপবিডি, রকমারি সহ অন্যরকম গ্রুপের কর্ণধার। তিনি বলেন তিনি ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবসায় নেমেছেন, আর এই ৫০০ কোটি টাকা হচ্ছে তার ব্রেইনের দাম!
সফল ব্যক্তিরা স্বপ্ন দেখতে ভয় পান না; আর এরপরই লেগে পড়েন সেটিকে বাস্তবায়ন করবার জন্য। মনে পড়ে যায় ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা CEO মার্ক জুকারবার্গের কথা। তিনি ২০১৬ সালে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন যে অন্য সব কিছু ঠিক রেখে এমন একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বানাবেন, যেটা আয়রন ম্যান মুভির জার্ভিসের মত হবে, কিছুটা হলেও। এবং বছর শেষে দেখা গেলো তিনি এটা করে ফেলেছেন।
২. দ্রুত ঘুম থেকে ওঠাঃ
ইদানিং বেশ কিছু অনলাইন নিউজ এবং ব্লগে (মাঝে মাঝে নাম করা নিউজ / ব্লগগুলোতেও) দেখা যায় এমন সব লেখা যে – যারা রাত জাগে, তারাই নাকি বেশী বুদ্ধিমান! কিন্তু সফলদের জীবনী স্ট্যাডি করলে দেখবেন এক্ষেত্রে তাঁরা একেবারেই উল্টা। বরং তাঁরা বিশ্বাস করেন যে দ্রুত ঘুম থেকে ওঠাই হচ্ছে তাঁদের সফলতার অন্যতম কারণ। রাতজাগাকে তাঁরা আদতে খারাপ ভাবেই দেখেন, অন্তত নিজেদের জন্য। তাঁরা দ্রুত ঘুম থেকে উঠে অফিসে গিয়ে বা বাসায় বসেই নিজের সারা দিনের কাজের হিসাবটা মিলিয়ে নেন। অনেকে বলেন যে রাত্রে জাগেন নিরিবিলি পরিবেশে কাজ করার জন্য। কিন্তু খুব ভোরেই আসলে প্রকৃত নিরবতাটা উপলব্ধি করা যায়।
৩. সময়ানুবর্তিতাঃ
সফল ব্যক্তিদের জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, তাঁরা কাজকে অগ্রাধিকার দেন, এবং সোশ্যাল হওয়াকে রাখেন দ্বিতীয় স্থানে। সোশ্যাল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ, এটি মানুষকে আপনার সাথে সদ্ভাব গড়ে তুলতে সহযোগীতা করে। কিন্তু সময়ানুবর্তিতাকে গুরুত্ব দেবার প্রধান কারণ হলো, সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে পারাটা অনেকাংশেই আপনাকে প্রশান্তি দিবে। আর প্রশান্ত মনে আপনি যদি কারও সাথে মিশেন, দেখবেন আপনার বাকি যে সব ক্লান্তি, তাও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।
৪. ঘুমঃ
ঘুমের বিষয়ে কি আগে কথা বলা হয়েছে? হ্যাঁ, সেটা ছিলো ঘুম থেকে দ্রুত ওঠার বিষয়ে। এখানে বাড়তি পয়েন্টে আবার ঘুমের কথা লেখার কারণ হচ্ছে, আপনি হয়ত আগের পয়েন্টটি পড়ে দ্রুত ঘুম থেকে ওঠার জন্য অল্প পরিমানে ঘুমাতে পারেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের সাথে মানসিক ও শারীরিক চাপের সম্পর্ক রয়েছে। অল্প এবং হালকা ঘুম মানুষকে বেশী চাপের মধ্যে রাখে, এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ব্যাহত করে। অপর দিকে সফল ব্যক্তিগণ দ্রুত ঘুমাতে যান, এবং সব সময় চেষ্টা করেন গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে, ফলে ভোরে যখন ঘুম থেকে উঠেন, একদম ফ্রেশ একটি অবস্থায় উঠেন। আর পরিমিত ঘুম আপনার স্বাস্থ্যকেও রাখবে ভালো, তাই এ বিষয়ে অবহেলা করতে নারাজ সফলেরা।
৫. সাধারণত্বঃ
সাধারণত্ব বজায় রাখা সফলদের একটি গোপন অস্ত্র। তাঁরা অনেক বড় কিছু বলে তাঁরা এমন কাজের চাপ নেন না, যা তাঁদের আয়েত্ত্বের বাইরে। তাঁদের রুটিন গুলি হয় খুব সাধারণ। তাঁরা অপরকে খুশি রাখার চেষ্টা না করে নিজের কাজকে ভালো করবার চেষ্টায় বেশী ব্যস্ত থাকেন।
৬. পরিবর্তনে আগ্রহীঃ
সফল উদ্যোক্তারা সাধারণত নিজেদের পরিবর্তন নিয়ে ঘাবড়ে যান না। তাঁরা পরিবর্তনের সুযোগ পেলে পরিবর্তিত হন। সময়, সমাজ, টেকনোলজি ইত্যাদির সাথে সাথে তাঁরা তাঁদের নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিতে খুব বেশীই সচেষ্ট থাকেন। ফলে, তাঁরা সাধারণ মানুষের কাছেও বেশী গ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েন। আর তাঁদের মধ্যে যেহেতু স্বপ্ন কাজ করে, তাই তাঁরা সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্যও সহজেই নিজেদের পরিবর্তন করতে সদা প্রস্তুত থাকেন। আপনি হয়ত চাইছেন, আপনার প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মী সকাল ৯টার মধ্যে অফিসে উপস্থিত থাকুক, কিন্তু আপনি যদি সেটা নিজে করে উদাহরণ তৈরী করতে না পারেন তবে আপনি আপনার কর্মীদের কাছ থেকেও এটি আশা করতে পারবেন না। আপনি যদি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নতুন টেকনোলজির সাথে পরিচিত করাতে রাজি না থাকেন, তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠানকেও মানুষ সহজে গ্রহন করবে না।
৭. কৌতুহলীঃ
সফল উদ্যোক্তাদের অন্যতম আরেকটি গুন হচ্ছে, তাঁরা প্রচন্ড মাত্রায় কৌতুহলী। একটা পদ্ধতি কিভাবে কাজ করে, কি হলে মানুষ আরও সুন্দর ভাবে এটি গ্রহণ করবে, নতুন কি শেখার আছে, মানুষ তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে কি আশা করে, ইত্যাদি বিষয়ে তাঁরা সব সময় নজর রাখেন। তাঁরা প্রশ্ন করতে দ্বিধা করেন না। তাঁরা নিজেদেরকে পরিবর্তের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে পছন্দ করেন এবং সর্বদা নিজেদের আপডেট রাখতে চেষ্টা করেন।
৮. ফোকাসঃ
আমার দেখা প্রায় সকল নতুন উদ্যোক্তারাই ফোকাস ধরে রাখতে পারেন না; যেখানে সফলেরা সব সময় ফোকাস ধরে রাখার বিষয়টাতেই সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে থাকেন। মার্ক জুকারবার্গ তাঁর ফেসবুকের সাথে সাথে অনেক কিছুই করছেন, এবং ভবিষ্যতেও করবেন, কিন্তু তাঁর মূল ফোকাস সেই ফেসবুকই। কিন্তু নতুনদের ভিতরে এই জিনিস কম। তারা শুধু এই আইডিয়া থেকে ঐ আইডিয়ায় ভ্রমণ করে বেড়ায়। ফোকাস থাকবার একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, এতে করে আপনি দ্রুতই একটি জিনিস সম্পর্কে খুব ভালো জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন, আবার সেটিতে নতুন কিছু যোগও করতে পারবেন।
সর্বোপরি, প্রায় সকল সফল উদ্যোক্তা তাঁদের জীবনকে একটি সহজ সরল পথে নিয়ে আসেন। তাঁদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, যা তাঁদের অন্য সবার থেকে আলাদা করে, এমনকি অন্য সকল সফলদের থেকেও। কিন্তু উপর বর্ণিত বিষয়গুলি খুঁজলে প্রায় সকল সফল উদ্যোক্তার মধ্যেই এর প্রতিফলন দেখতে পাবেন। তো, আপনি পরিবর্তন হচ্ছেন কবে?
- Written by: bdpreneur
- Posted on: January 28, 2019
- Tags: অনুপ্রেরণা, আত্মনির্মান, ক্যারিয়ার ডেভলপমেন্ট, ব্যবসা বানিজ্য, সাফল্য, সেলফ হেল্প