অফিস মিটিং সাকসেসফুল করতে যে ১২ টি শিষ্টাচার মেনে চলা উচিত!

বিজনেস করেন কিংবা চাকরি, অফিসে ঢুকলেই মিটিং আর মিটিং! এখন এই মিটিং তো তখন ঐ মিটিং। আর এই দৈনন্দিন ব্যস্ততামুখর জীবনে কম বেশি আমাদের সবারই ব্যবসায়িক কাজে কিংবা অফিসের বিভিন্ন কাজ নিয়ে মিটিং করতেই হয়। এ যেন ব্যবসায়ের কাজে কিংবা অফিসের বড় অথবা ছোট কাজের জন্য অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। মিটিং করাটা যে শুধু আমাদের কর্পোরেট জগতেই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়, ব্যক্তি লাইফেও এর কার্যকারিতা দেখা যায়।

মিটিং খুব ছোট একটা শব্দ হলেও এর কিছু নিয়ম কিংবা শিষ্টাচার আছে যা আমরা আমাদের ব্যক্তি লাইফ কিংবা ব্যবসায়িক কাজ অথবা অফিসের মিটিংয়ে ফলো করতে পারি। যে শিষ্টাচার গুলো ফলো না করলে বরং নিজের পার্সোনালিটি কিছুটা হ্যাম্পার হয় পাশাপাশি মিটিংয়ে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে একটা নেগেটিভ ভাইব তৈরি হয়। ব্যবসায়িক কাজের বদৌলতে বেশকিছু মিটিংয়ে আমি উপস্থিত ছিলাম এবং পর্যবেক্ষণ করলাম, মিটিং চলাকালীন যদি কিছু শিষ্টাচার আমরা মেনে চলি বা সেগুলো আমাদের আয়ত্বের মধ্যে নিয়ে আসি তবে মিটিংয়ে উপস্থিত দু’পক্ষের জন্যই সেটা ফলপ্রসূ হয় বা হবে। আসুন তবে জেনে নেই, ব্যবসায়িক কাজ বা অফিস মিটিংয়ের সময় যে শিষ্টাচার গুলো ফলো করা উচিত বা মেনে চলা উচিতঃ

(০১) মিটিংয়ে অংশ গ্রহণ করার সময় পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে তবেই মিটিং এটেন্ড করুন। যেমনঃ মিটিংয়ে যথাসময়ে উপস্থিত হওয়া, খাতা-কলম সাথে রাখা, নিজের প্রেজেন্ট করার কিছু থাকলে সেগুলো আগে থেকে রেডি রাখা। এক্ষেত্রে যদি হুট করে কিংবা কোনো ইনফর্ম করা ছাড়া মিটিং ডাকা হয় তবে অবশ্যই মিটিংয়ের এজেন্ডা গুলো জেনে নেয়ার চেষ্টা করুন তারপর মিটিংয়ে উপস্থিত হোন।

(০২) মিটিংয়ে অবশ্যই ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে ফোন সাইলেন্ট করে রাখুন। আর যদি খুব বেশি আর্জেন্ট কোনো কল এসে থাকে তবে অবশ্যই মিটিংয়ে উপস্থিত ব্যক্তিদের থেকে অনুমতি নিয়ে অন্যকোন রুমে গিয়ে কথা বলা শেষ করে আসুন যতদ্রুত সম্ভব।

(০৩) প্রয়োজন না হলে ল্যাপটপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে অন্যের মনোযোগ নষ্ট হবে না।

(০৪) মিটিংয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। অপ্রাসঙ্গিক কথা মিটিংকে দীর্ঘায়িত করে। সুতরাং, এই বিষয়টি এড়িয়ে চলুন।

(০৫) আপনি যদি মিটিংয়ের সঞ্চালক না হয়ে থাকেন তবে ১মিনিট রুল ফলো করুন। অর্থাৎ ১মিনিটে আপনি আপনার মূল বক্তব্য বা মতামত বলা শেষ করুন।

(০৬) মিটিংয়ে বক্তার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনুন কিংবা কেউ কথা বলতে চাইলে তাকে কথা বলার সুযোগ দিন এবং প্রয়োজনীয় নোট নেয়ার থাকলে নোট নিন।

(০৭) কথা বলার সময় অবশ্যই নিজেদের অঙ্গভঙ্গিতে অমায়িক হোন। খেয়াল রাখুন, আপনার অঙ্গভঙ্গির কারণে যেন অন্যকেউ বিব্রত না হয়।

(০৮) মিটিংয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার হচ্ছে “রাগ” না হওয়া। মিটিংয়ে সবসময় চেষ্টা করবেন কুল থাকার এবং রাগ করার পরিবেশ তৈরি হলেও সেটিকে টেকনিক্যালি হ্যান্ডেল করুন এবং শান্ত থাকুন।

(০৯) মিটিংয়ে অন্যের কাজ/এচীভমেন্ট/মতামতের প্রশংসা করার অভ্যাস করুন। এতে করে টিম বন্ডিংটাও ভালো হয়।

(১০) মিটিং চলাকালীন অনেক সময় ফিডব্যাক দিতে হয়। ফিডব্যাক দেয়ার সময় চেষ্টা করুন নেতিবাচক কোনো কথা না বলার। নেতিবাচক কথা গুলোকে এড়িয়ে চলুন।

(১১) মিটিংয়ে কোনো ভাবেই তর্কে জড়ানো যাবে না। এদিকটা খেয়াল রাখুন সতর্কতার সাথে।

(১২) মিটিংয়ে অন্য কেউ যখন কথা বলবে কিংবা তার বক্তব্য তুলে ধরবে তখন কোনো ভাবেই পাশের জনের সাথে কথা বলা যাবে না। এতে মিটিং এবং বক্তা দু’টোরই ইন্ট্রারাপ্ট হয়। আর তাই পাশের জনের সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। এটি একটি ব্যাড ম্যানার হিসেবে ধরা হয়।

আমরা মূলত বিজনেস কিংবা অফিস মিটিং কেন করি? বিজনেস কিংবা অফিসের নানান রকম সমস্যার সমাধান, সিদ্ধান্ত, সবার মতামত শোনা অথবা গ্রহণ, ক্লায়েন্ট হ্যান্ডেল ইত্যাদি বিষয় ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে এই মিটিংয়ের আড়ালে। অনেকেই মনে করে থাকেন, মিটিং করা মানেই সময় নষ্ট কিন্তু এই মিটিংটি যদি সবাই মিলে ফ্রুটফুল করা যায় তবেই এর সার্থকতা। আর তাই ব্যবসায়িক কাজ বা অফিস মিটিংয়ের সময় উপরের এই শিষ্টাচার গুলো যদি মেনে চলেন কিংবা নিজেদের মধ্যে আয়ত্বে আনেন তবে সময় নষ্ট না হয়ে বরং মিটিংটি আশা করি সাকসেসফুল হবে। এবং এই শিষ্টাচার গুলো শুধুমাত্র কর্পোরেট জগতের জন্য নয় বরং একজন উদ্যোক্তার জন্যও জানা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply