১০ টি সিম্পল স্টেপসে তৈরী করুন আপনার বিজনেস প্রোফাইল

বিজনেস প্রোফাইল হচ্ছে ব্যবসায়ের ফার্স্ট ইম্প্রেশন যা দিয়ে আপনি আপনার কাস্টোমারদের কে লাস্ট ইম্প্রেশন পর্যন্ত ধরে রাখতে পারবেন।

আপনার ব্যবসা ছোট হোক কিংবা বড়, হোক সেটি দু’বছরের কিংবা দীর্ঘসময়ের, আপনার নিজস্ব একটি বিজনেস প্রোফাইল থাকা চাই।

ব্যবসায়ের মূল ভিত হচ্ছে বিশ্বাস। আপনার কাস্টোমার যখন আপনার প্রোফাইল পড়ে সঠিক তথ্য পাবে তখন অনায়াসেই একটি বিশ্বাসের ভিত তৈরি হবে যা পরবর্তীতে আপনার ব্যবসায়ের জন্য একটি পজেটিভ ফিডব্যাক নিয়ে আসবে। বিজনেস প্রোফাইল দিয়ে আপনি আপনার ব্যবসাটাকে রিপ্রেজেন্ট করছেন আপনার কাঙ্ক্ষিত কাস্টোমারদের কাছে। সুতরাং, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন বিজনেস প্রোফাইল কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে আপনার ব্যবসায়ের জন্য। চাইলে আপনি ১০টি সিম্পল স্টেপসে নিজের বিজনেস প্রোফাইল তৈরী করতে পারেন। আসুন জেনে নেই, বিজনেস প্রোফাইল তৈরী করার ১০টি সিম্পল স্টেপস।

১। প্রোফাইলের উদ্দেশ্য সনাক্ত করুনঃ অনেক ব্যবসায় কোম্পানির ওয়েবসাইট, বিজনেস পোর্টফোলিও এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনা সহ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কোম্পানির প্রোফাইল ব্যবহার করে। সুতরাং, প্রোফাইলটি কাগজে কলমে দেয়ার আগে সর্বপ্রথম বিজনেস প্রোফাইলটির একমাত্র উদ্দেশ্য সনাক্ত করা অত্যাবশ্যক। প্রয়োজনে আপনি পরবর্তী পর্যায়ে এটিকে মানিয়ে নিতে পারেন।

২। একটি স্টাইল ডিসাইড করুনঃ আপনার প্রোফাইলের জন্য আপনি কী ধরণের স্টাইল ডিসাইড করতে চাচ্ছেন এবং কীভাবে তথ্য উপস্থাপন করবেন তা সর্বপ্রথম নিশ্চিত করুন। আপনি কি আপনার স্টাইলটি টিপিক্যাল ভাবে উপস্থাপন করতে চান নাকি একটি টাইমলাইন এর মত করে বিভিন্ন সেকশন আকারে বিভক্ত করে উপস্থাপন করতে চান? সেটি ডিসাইড করুন। কিছু কোম্পানী আছে, তারা তাদের গল্প ইমেজ আকারে উপস্থাপন করে। যেমনঃ Philips. তাদের বক্তব্য এমন, “you shouldn’t be afraid of being different and swaying away from the norm, as long as it ties in your brand.”

সুতরাং, যতক্ষণ না আপনার নিজস্ব ব্র্যান্ডের সাথে যুক্ত হচ্ছেন বা একটি নির্দিষ্ট স্টাইল ডিসাইড করছেন ততক্ষণ পর্যন্ত নিজের ব্রান্ড বা স্টাইল ডিসাইটের পিছনে সময় দিন। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি যদি একাউন্টিং ফার্ম হয়ে থাকেন তবে ট্র্যাডিশনাল ফর্মেটে লেগে থাকা ভালো এবং এতে রিসেন্ট যেই পুরষ্কার ও এচিভম্যান্ট গুলো আছে সেগুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে বা রাখতে পারেন।

৩। একটি স্টোরি রাখুনঃ আপনি যখন লোকদেরকে আপনার ব্যবসায়ের দিকে মনযোগ দিতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন ঠিক তখনই আপনার প্রয়োজন একটি মনোমুগ্ধকর স্টোরির। এমন একটি স্টোরি যে স্টোরির মধ্যে পাঠকরা তাদের নিজেদেরকে বা নিজেদের স্টোরির সাথে মিল খুঁজে পাবে। আপনি নিজে ব্যবসা করে ব্যবসা বাড়াচ্ছেন বা আপনার পারিবারিক ব্যবসা বাড়াচ্ছেন এটা বিবেচ্য বিষয় নয় বরং আপনি কিভাবে এই ব্যবসা কে ভিন্ন ভাবে, ভিন্ন আঙ্গিকে জুড়েছেন এটাই মুখ্য। সবার স্টোরি যে এক হবে বা খুব উত্তেজনাপূর্ণ হবে সেটা ভাবাও ঠিক নয়। উদাহরণ হিসেবে Zappos’s স্টোরিটি একবার দেখে নিতে পারেন কারণ এই জনপ্রিয় ব্রান্ডটি সত্যি স্টোরি বলার শিল্পকে আয়ত্ত করে ফেলেছে। সুতরাং, অবশ্যই আপনার একটি বলার মতো স্টোরি থাকতে হবে।

৪। আপনার মিশন স্ট্যাস্টমেন্ট তৈরি করুনঃ ইতিমধ্যে আপনার যদি কোন মিশন স্ট্যাট্মেন্ট তৈরি করা না থাকে তবে সময় এসেছে এটি তৈরি করার। আপনার ব্যবসায়ের মান, নীতি ও কৌতূহল এগুলো নিয়েই আপনার মিশনটিকে সাজান। আপনি কি অফার করছেন, ব্যবসা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি এগুলো আপনি আপনার পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিন, তাদের কে জানান। তারা আপনাকে অন্যদের থেকে কেন বেছে নিবে সেটি তাদের কাছে ক্লিয়ার করুন।

৫। একটি ক্লিয়ার ফরমেট তৈরি করুনঃ একটি ক্লিয়ার ফরমেট আপনার বিজনেস প্রোফাইলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ। কিছু ক্রিয়েটিভ ব্যক্তি আছেন যারা বিজনেস প্রোফাইলটি লিখতে গেলে ওয়াইল্ড ইমাজিনেশন করে প্রোফাইলটি লিখে! সুতরাং, আপনি যদি এই লোকদের মত হয়ে থাকেন তবে নিচের পরামর্শটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন –
আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার ফরমেটটি একদম ক্লিয়ার ফরমেটে আছে যেমনঃ

বডি টেক্সট এবং শিরোনাম গুলোর জন্য আপনি একই ফন্ট ব্যবহার করেছেন কিনা।
অপ্রাসঙ্গিক ভিজ্যুয়াল বা ফাংকি রঙ দিয়ে প্রোফাইল সাজাবেন না।
আপনার ব্রান্ডের সাথে যায় এমন সঙ্গতিপূর্ণ কিছু দিয়ে নিজের বিজনেস প্রোফাইল তৈরি করুন।

৬। ক্রমান্বয়ে কোম্পানির ইতিহাস লিখুনঃ অতীত থেকে বর্তমান এবং পুনরায় আবার পিছনে ফিরে যাওয়া এটা শুধু আপনার পাঠককে কনফিউসড করে তুলবে, যার কারণে আপনাকে আপনার কোম্পানীর ইতিহাস কে ক্রোনোলজিকাল ফরমেটে লিখুন। এটি একটি টাইমলাইন বা অনুচ্ছেদের আকারে করা হবে কিনা তা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করবে। এটা কতোটা ক্রিটিক্যাল বা পাঠকের কাছে কতোটা বোধগম্য সেটি সম্পূর্ণ আপনাকেই সাজাতে হবে এবং সাজানো বা লিখার সময় খুব বেশি ডিটেইলে লিখার প্রয়োজন নেই। আপনি আপনার কোম্পানীকে বর্তমানে কোথায় নিয়েছেন, আপনার অর্জন গুলো কি কি, সেগুলোই আপনি তালিকাভুক্ত করতে পারেন। আপনি যদি ছোট ব্যবসায়ী হন তবে আপনি ব্র্যান্ডের স্থাপনা এবং ডেভলপমেন্ট সম্পর্কে তথ্য লিখতে পারেন।

৭। প্রশংসাপত্র অন্তর্ভুক্ত করুনঃ কাস্টোমাদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিয়ে সেটি প্রশংসাপত্র হিসেবে যুক্ত করে আপনার ব্যান্ড ভ্যেলু বাড়াতে পারেন। যেকোন B2B সংস্থায় এই প্রশংসাপত্র গুলোই আপনার বৃহত্তম ক্লায়েন্টদেরকে খুঁজে পেতে সহায়তা করে। অন্যদিকে কোন B2C সংস্থায় আপনার মূল্যবোধের সাথে সম্পর্কযুক্ত ফিডব্যাক গুলো সবচেয়ে ভাল কাজ করে । আপনি আপনার ক্লায়েন্ট বা রিডারদেরকে প্রকৃত ফিডব্যাক দিয়ে তাদের সাথে কানেক্ট হওয়ার চেষ্টা করুন কোন রকম প্রমোশনাল চিন্তাভাবনা ছাড়াই।

৮। আপনার কন্টাক্ট ইনফরমেশন অন্তর্ভুক্ত করুনঃ এভাবে আপনার গুরুত্বপূর্ণ স্টেপগুলো সাজানোর পর আসে কিছু দরকারী কন্টাক্ট ইনফরমেশন এড করার। যদি আপনার বিজনেস প্রোফাইল অফলাইনে ব্যবহার করতে হয়, তবে ডকুমেন্টের শীর্ষে আপনার ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর, ই-মেইল এবং ফ্যাক্স (যদি প্রয়োজন হয়) অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে নিশ্চিত হন। এছাড়াও এটি যদি কোনও ওয়েবসাইট বা অন্য অনলাইন ফোরামের জন্য হয়ে থাকে তবে আপনি কেবল পৃষ্ঠার নিচে আপনার হাইপারলিঙ্কযুক্ত কন্টাক্ট ইনফরমেশন যুক্ত করতে পারেন।

৯। ‘কল টু অ্যাকশন’ যুক্ত করুনঃ আপনি যদি সত্যিই আপনার বিজনেস প্রোফাইলে ফিনিশিং টাচ যুক্ত করতে চান তবে অবশ্যই অ্যাকশন কল এর একটি অপশন রাখুন। যেমনঃ ‘To find out more, visit our website” or “For further information, contact XXXXXX’. মূলত আপনি আপনার পাঠকদের জন্য তাদের প্রশ্নের উত্তরগুলির সন্ধানের একটি উপায় রেখে যেতে পারেন এর মাধ্যমে।

১০। প্রুফরিড করুনঃ সবশেষে আপনার কর্পোরেট বিজনেস প্রোফাইলটি প্রুফরিড করুন, এতে যেন কোন রকম ভুল-ত্রুটি না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। এটি আপনার ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনেক সময় ছোট ছোট ভুল গুলোও মিস হয়ে যায়, তাই যখন প্রুফরিড করবেন তখন সতর্কতার সাথে করুন এবং রেগুলারলি এই বিজনেস প্রোফাইলটি আপডেট করতে ভুলবেন না। অনেক উদ্যোক্তারাই তাদের বিজনেস প্রোফাইল তৈরি করে সেটি আপডেট রাখতে ভুলে যায়। এই ভুলটি যেন আপনি না করেন সেদিকে খেয়াল রাখুন, প্রয়োজন হলে আপনি একটি রিমাইন্ডার ক্যালেন্ডার বানিয়ে রাখতে পারেন। একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর বিজনেস প্রোফাইলটি আপডেট করে রাখলে আপনার বিজনেস এক্সপান্ডিংও বেড়ে যাবে।

উপরের এই ১০টি সিম্পল স্টেপস ফলো করে আপনি আপনার বিজনেস প্রোফাইলটি তৈরী করতে পারেন। বিজনেস প্রোফাইল টি আপনাকে আপনার ব্রান্ডিং স্ট্রেটেজি, কমিউনিকেশন, নতুন কাস্টোমার একুইজিশন সব দিকেই সহায়তা করবে।

Leave a Reply